মানুষের অন্যতম দামী সম্পদ হচ্ছে এটেনশান বা মনোযোগ। এই এটেনশান দেওয়া বা নেওয়ার মাধ্যমে ক্ষমতা, সম্মান, অর্থ-বিত্ত, টাকা-পয়সা অর্জিত হয়।
এজন্য সবাই আপনার এটেনশান চায়। কারন আপনার এটেনশানই অন্যের লাভের কারন।
সারাদিন যদি আমরা নিজেদের এটেনশান খেয়াল করি তাহলে দেখা যাবে এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে সারাদিন প্রায় থাকেই না।
এটেনশানের এক বড় অংশ নিয়ে যায় মোবাইল ফোনের স্ক্রীন। সারা পৃথিবীতে দিনে গড় স্ক্রীন টাইম প্রায় সাড়ে ছয় ঘন্টা। খাওয়া, ঘুম ও পেশাগত কাজ বাদ দিলে আমাদের হাতে খুব অল্প সময় থাকে। এই অল্প সময় এবং খাওয়া, ঘুম ও পেশাগত কাজে বরাদ্দকৃত সময়ের মধ্যেও আমাদের এটেনশান নিয়ে নিচ্ছে ফেসবুক, ইউটিউব সহ অন্যান্য সোস্যাল মিডিয়া।
যারা আমাদের এটেনশান নিয়ে থাকে তারা আমাদের এটেনশানকে টাকায় কনভার্ট করে নিচ্ছে। আমাদের এই দামী সম্পদ এটেনশান আমাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেই।
.
ইউটিউবে ভিডিও দেখতে গেলে প্রচুর এড আসে। সাথে আরও আসে স্পন্সর্ড ভিডিও। ইউটিউবে ঢুকলে মনে হয় টেলিভিশন অন করে এড দেখতে বসলাম।
অথচ আপনি যদি ইউটিউব প্রিমিয়াম টাকা দিয়ে কিনে ব্যবহার করেন তাহলে ফ্রেশ ভিডিও দেখতে পাবেন। কোন এডের ঝামেলা নেই, নেই কোন স্পন্সর্ড ভিডিও। আপনি আপনার পছন্দমত ভিডিও দেখতে পাবেন।
ইউটিউব আপনার এটেনশান তার এডের দিকে নিতে চায়। এর দ্বারা তারা অর্থ উপার্জন করে।
এডের দিকে তারা আপনার এটেনশান নিবে না এই শর্তে যে আপনাকে টাকা দিয়ে ইউটিউব প্রিমিয়াম নিতে হবে।
আমাদের এটেনশান নিয়ে কীভাবে অন্যরা মনিটাইজ করে নিচ্ছে এটা তার বড় একটা উদাহরণ।
.
Slow down and draw things out.
When people look slowly, they make discoveries.
এটেনশান অনেক দামী বলেই সবাই সেটা কৌশলে নিয়ে নিতে চায়। তো আমাদের করণীয় কী?
করণীয় হচ্ছে এটা আগে অনুধাবন করা যে সবাই আমাদের এটেনশান নিতে চায়। অর্থাৎ আমার এটেনশান আমার নিয়ন্ত্রণে প্রায় থাকেই না। এমতাবস্থায় এটেনশান প্রথমত নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে। এবং সেটা আমাদের সিলেক্টিভ জায়গাগুলোতে প্রয়োগ করতে হবে।
আপনি যেখানেই এটেনশান দিবেন সেটাই আপনার কাছে ধরা দিবে। ভালো দিকে এটেনশান দিলে ভালো জিনিস ধরা দিবে আর মন্দ দিকে দিলে মন্দটা ধরা দিবে।
আপনি কোথায় কোথায় এটেনশান দিচ্ছেন এটার সমষ্টিই হলো আপনার জীবন।
আপনার জীবন যদি বোরিং হয়, যদি মনে হয় জীবন দিন দিন অর্থহীন হয়ে পড়ছে, জীবন নিয়ে যদি আপনি হতাশা বোধ করেন এবং এগুলো থেকে যদি মুক্তি চান তাহলে আপনার এটেনশানের দিক পরিবর্তন করতে হবে।
অর্থাৎ যে বিষয়গুলোতে আপনার মনোযোগ সারাদিন আচ্ছন্ন থাকে মনোযোগ প্রয়োগের ক্ষেত্রে সে বিষয়গুলোর পরিবর্তন করতে হবে। অন্যদিকে বা অন্য ভালো কিছুতে মনোযোগ দিতে হবে।
মনোযোগের কেন্দ্র পরিবর্তিত হলে জীবনেও পরিবর্তন আসবে।
.
সর্বক্ষণ আমাদের মনোযোগ কোথাও না কোথাও কেন্দ্রীভূত থাকে। এটা অবচেতন মনে ঘটে। মনোযোগ নিয়ন্ত্রিত হয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে। মনোযোগকে কাজে লাগানোর পদ্ধতি হলো কোথায় মনোযোগ দিতে চান সেটা সচেতনভাবে আগে থেকে ঠিক করে নেওয়া।
যে বিষয় বা লক্ষ্য অর্জন করতে চান সেটা স্থির করতে পারলে মনোযোগ সেদিকে কেন্দ্রীভূত করা সহজ হয়। আর যদি কোন লক্ষ্য স্থির না থাকে তাহলে মনোযোগ বিক্ষিপ্ত থাকে। তখন মনোযোগ যে কেউ চুরি করতে পারে। আপনি সামনে যাই দেখবেন বা শুনবেন মনোযোগ সেদিকে চলে যাবে। সেটার নিয়ন্ত্রণ তখন আর আপনার হাতে থাকবে না।
.
অর্ডিনারি জিনিস এক্সট্রা অর্ডিনারি কীভাবে হয়?
এভাবে বলা যায়, অর্ডিনারি কোন কিছু + এটেনশান = এক্সট্রা অর্ডিনারি কোন কিছু।
এটেনশানটা হচ্ছে ম্যাগনিফাইং গ্লাসের মত। কোন অর্ডিনারি জিনিসের উপর ম্যাগনিফাইং গ্লাস রাখলে তার অনেক ছোট বিন্দুসম খুটিনাটি যেমন নজরে আসে তেমন কোন বিষয়ের উপর এটেনশান দিলেও সেটার এক্সট্রা অর্ডিনারি বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ে।
এই দামী সম্পদ মনোযোগ কে কাজে লাগাতে হলে কোথায় মনোযোগ দিতে চান সেটা আগে ঠিক করে মনোযোগের দিকটা সেদিকে ঘুরিয়ে দিলেই হবে।
.